প্রতিটি গাড়ির ইঞ্জিনের হুডের নিচে আমরা কিছু ছোট ট্যাংক দেখতে পাই। এগুলোর মধ্যে কিছু নিয়মিত চেক করা জরুরি। আবার কিছু আছে যা প্রতিদিন না চেক করলেও সপ্তাহে অন্ত্যত ১বার হলেও চেক করা প্রয়োজন।
কি কি অয়েল বা তরল পদার্থ থাকে??
- ইঞ্জিনঅয়েল
- ব্রেকঅয়েল
- গিয়ারঅয়েল
- পাওয়ার স্টিয়ারিংঅয়েল
- কুলেন্ট ওয়াটার বা রেডিওয়াটার
- ওয়াশার ওয়াটার বা রেইন ওয়াইপার ফ্লুইড
ENGINE OIL
ইঞ্জিন অয়েল
ইঞ্জিন অয়েল কি?
সহজ কথায় বলতে আমরা সকলেই জানি প্রতিটি ইঞ্জিনের ভিতরে কিছু জিনিস ক্রমাগত চলতে থাকে বা ঘর্ষণ হতে থাকে যেমনঃ টাইমিং চেইন, ক্র্যাংকশ্যাফট, পিস্টন ইত্যাদি। আর এইসবের ঘর্ষণ গুলো যাতে আরোও দ্রুত ও স্মুথলি হয় সেইজন্য ইঞ্জিনওয়েল ব্যবহার করা হয়। ইঞ্জিনঅয়েলের কাজ হলো এই চলমান পিস্টন গুলোর ঘর্ষণকে আরোও দ্রুত করা বা ঘর্ষন কমানো।
ইঞ্জিনঅয়েলের ধরণ
Synthetic oil
Synthetic blends
High mileage oil
Conventional oil.
ইঞ্জিনঅয়েলের গ্রেড কি?
SAE (Society of Automotive Engineers)ইঞ্জিনঅয়েল ও ট্রান্সমিশন ওয়েলের সান্দ্রতার উপর ভিত্তি করে তাদের গ্রেড নামকরন করেছে। সান্দ্রতা হল তরলের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণকে প্রকাশ করার পরিমাণ। ঘরের তাপমাত্রায় বিভিন্ন ইঞ্জিনের তেলের বিভিন্ন সান্দ্রতা থাকে। তারা তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য ভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। যেমনঃ 0W, 5W, 10W, 15W, 20W, 25W, 20, 30, 40, 50, and 60। এখানে W দ্বারা ইঞ্জিনওয়েলের weight বোঝায়। কম সান্দ্রতা হলে সেই তেল পাতলা হবে আর বেশি সান্দ্রতা হলে সেই তেল বেশি ঘন হবে।বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় গাড়িতে 0W-20 এবং 5W-30 ব্যবহার করে কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখা দরকার কোন গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য কোন গ্রেড প্রয়োজন। কোম্পানি প্রদত্ত কিছু তথ্য থাকে যা আমরা মেনে চলা উচিত তাহলে ইঞ্জিন ভালো থাকবে।
কিভাবে ইঞ্জিনঅয়েল চেক করতে হবে??
সপ্তাহে অন্ত্যত ১ বার হলেও ইঞ্জিনওয়েল চেক করা প্রয়োজন।
১.সকালে গাড়ি স্টার্ট করার আগে অর্থাৎ ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকা অবস্থায় চেক করতে হবে।
২.ডিপস্টিকটি আস্তে করে খুলে নিতে হবে।
৩.সাদা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে।
৪.পূনরায় ডিপস্টিকটি প্রবেশ করিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার খুলে নিতে হবে।
৫.তারপর লক্ষ্য করবেন ডিপস্টিকে হাই বা লো দাগ কাটা থাকবে। পাশের ছবিটি লক্ষ করুন। যদি কম থাকে তাহলে রিফিল করবেন পরিমান মত নরমাল রেঞ্জ থাকলে কিছুদিন পর আবার চেক করবেন।
৬.আবার একটি সাদা টিস্যু দিয়ে ডিপস্টিকটি
মুছে নিবেন যদি দেখেন টিস্যুটি বেশি কালো
হয়েছে এবং আঙ্গুলে লাগিয়ে যদি অনুভব করেন
বেশি পাতলা হয়েছে পানির মত তাহলে।
বুঝবেন ইঞ্জিনওয়েল পরিবর্তন করার সময় হয়েছে।
৭.ওয়ার্নিং সাইন আসলেও ইঞ্জিনওয়েল চেক করতে হবে।
(পাশের ছবি গুলো খেয়াল করুন)
সাধারনত আমাদের দেশের প্রায় সকল মেকানিক ৩০০০-৩৫০০কিঃ মিঃ পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন। এতে ইঞ্জিন ভালো থাকে। তবে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে গাড়ির কম্পানি রিকমান্ডেড যেই অয়েল আছে তা ব্যবহার করা।
BRAKE OIL
ব্রেক অয়েল
ব্রেক অয়েল হল রাসায়নিক পদার্থ যা আধুনিক গাড়ির হাইড্রোলিক ব্রেকিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রেক প্যাডেলের উপর আপনার পায়ের চাপ শক্তি বাড়ানোর জন্য এবং এটি আপনার গাড়ির ব্রেকের চাপে পরিণত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ব্রেক অয়েল ছাড়া, আপনার গাড়ি থামাতে আপনার পায়ের চাপ অনেক বেশি লাগবে।অর্থাৎ,ব্রেকে যাতে আপনার পায়ের চাপ বেশি দিতে না হয় তাই ব্রেক অয়েল ব্যবহার করা হয়।
ব্রেক অয়েল ট্যাংকঃ
এখানে ম্যাক্সিমাম ও মিনিমাম দাগকাটা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী এতে ফ্লুইড দিতে হবে। তিন ধরনের ব্রেক ফ্লুইড পাওয়া যায় তা হল DOT3, DOT4এবং DOT5। DOT3এবং DOT4 হল গ্লাইকোল-ভিত্তিক তরল, এবং DOT5হল DOT3এবং DOT4 হল সিলিকন-ভিত্তিক। প্রধান পার্থক্যজল শোষণ করে,যেখানেDOT5করে না। ব্রেক ফ্লুইডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর ফুটন্ত/বয়েলিংপয়েন্ট। তবে এটি নিয়ে আমাদের বেশি গবেষনা করার প্রয়োজন নেই।
TRANSMISSION/GEAR OIL
গিয়ার অয়েল
গিয়ার অয়েল আপনার ট্রান্সমিশন মসৃণভাবে চালাতে সাহায্য করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, এটি আপনার গাড়ির গিয়ার সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলিকে তাপের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।সাধারনত গিয়ার অয়েল ১০,০০০-২০,০০০ কিঃমিঃ পরপর পরিবর্তন করা ভালো। তবে গিয়ার অয়েলের ভালো খারাপের উপর ভিত্তি করে তা কমবেশি হতে পারে।
কিভাবে গিয়ার অয়েল চেক করবেন?(যেসব গাড়িতে ডিপস্টিক আছে)
1.ইঞ্জিনহুড খুলে ডিপস্টিক ( ঠিক যেমন ইঞ্জিনঅয়েলের ডিপস্টিক) লক্ষ করবেন।
তবে বর্তমানে আধুনিক গাড়িগুলোতে ডিপস্টিক থাকেনা। এক্ষেত্রে কম্পিউটার চেকআপের মাধ্যমে চেক করতে হবে।
2.ডিপস্টিকটি আস্তে করে খুলে নিতে হবে।
3.সাদা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে।
4.পূনরায় ডিপস্টিকটি প্রবেশ করিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার খুলে নিতে হবে।
5.তারপর লক্ষ্য করবেন ডিপস্টিকে হাই বা লো দাগ কাটা থাকবে। পাশের ছবিটি লক্ষ করুন। যদি কম থাকে তাহলে রিফিল করবেন পরিমান মতন আর যদি নরমালরেঞ্জ থাকে তাহলে কিছুদিন পর আবার চেক করবেন।
WASHER FLUID
ওয়াইপার ট্যাংক
এখানে মুলত পানি থাকে যা আপনার গাড়ির উইন্ডশিল্ডকে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকে এখানে শ্যাম্পু বা সাবানের পানি দিয়ে থাকে। এতে উইন্ডশিল্ডের কোটিং নষ্ট করে দিবে। বর্তমানে উইন্ডশিল্ডকে পরিষ্কার করার জন্য কিছু ট্যাবলেট পাওয়া যায় যা আপনার গাড়ির উইন্ডশিল্ডের কোটিং ভালো রাখে ও পরিষ্কার রাখে।
POWER STEERING
পাওয়ার স্টিয়ারিং অয়েল
পাওয়ার স্টিয়ারিং অয়েল হল হাইড্রোলিক তরল যা স্টিয়ারিং সিস্টেমের স্টিয়ারিং হুইল এবং সামনের চাকার মধ্যে একটি হাইড্রোলিক লিঙ্ক তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি চাকা ঘুরানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার পরিমাণ হ্রাস করে। পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড স্টিয়ারিং সিস্টেমের মধ্যে চলমান অংশগুলিকে লুব্রিকেট করে ফলে আপনাকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয়না। আপনি ব্রেক অয়েল যেভাবে চেক করবেন এটিও ঠিক একইভাবে চেক করা যায়।
তবে বর্তমান গাড়িগুলোতে ইলেকট্রনিক পাওয়ার স্টিয়ারিং থাকাতে কোন তরল ব্যবহার করে না তাই কোন কোন ট্যাংক এবং কোন রক্ষণাবেক্ষণ নেই। সম্পুর্ন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম হওয়াতে কোনো ঝামেলা নেই।
RADIATOR FLUID
রেডিয়েটর তরল কি ?
রেডিয়েটর তরল, যা একধরনের কুল্যান্ট বা অ্যান্টিফ্রিজ নামে পরিচিত, আপনার রেডিয়েটরকে ঠান্ডা রাখে এবং গাড়ির ইঞ্জিঙ্কে ঠান্ডা রাখে ।চলন্ত অবস্থায় গাড়ির ইঞ্জিন খুব গরম হয়, বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ায়। যদি কোনো কারণে আপনার গাড়ির রেডিয়েটরে থাকা তরল শেষ হয়ে যায় তবে ইঞ্জিন হিট হয়ে যাবে এমনকি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
রেডিয়েটর তরল চেকঃ
২ -৩দিন পর পর চেক করা উচিত। তবে এটি চেক করবেন যখন ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকে বা সকালে গাড়ি স্ট্যার্ট দেয়ার পূর্বে। কখনও ইঞ্জিন গরম থাকা অবস্থায় চেক করবেন না এতে গরম পানি ছিটকে উঠে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সকালে গাড়ি গাড়ি স্ট্যার্ট দেয়ার পূর্বে এটি চেক করে প্রয়োজন অনুযায়ী রিফিল করে নিবেন। এখানে অনেকে কুল্যান্ট ওয়াটার ব্যবহার করে তবে আপনি চাইলে মিনারেল ওয়াটারও ব্যবহার করতে পারেন। চেক করার সময় রিজার্ভ ট্যাংক সহ চেক করবেন।
ধন্যাবাদ
কার’স ফিড বিডির সাথেই থাকুন
“মনে রাখবেন,সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি তাই
সাবধানে গাড়ি চালাবেন ভালো থাকবেন”