DCT TRANSMISSION (DUAL CLUTCH TRANSMISSION) ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন কি??
আমরা জানি ডুয়েল মানে ২ টি ,তাইএর থেকেই বোঝা যায়এই ট্রান্সমিশন সিস্টেমে ২টি ক্লাচ থাকে ।বলা যায় মেনুয়াল ট্রান্সমিশন এবং অটো ট্রান্সমিশনের সমন্বয়ে এর তৈরি।ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনে কোনো ক্লাচ প্যাডেল নেই এটি হাইড্রোলিক ও অ্যাডভান্স কম্পিউটার সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে,যা অনেকটা অটো ট্রান্সমিশনের মতো।একে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন বা টুইন ক্লাচ ট্রান্সমিশনও বলা হয়ে থাকে।
এই ট্রান্সমিশনে ১-৬ অর্থাৎ ৬টি গিয়ার থাকে ,যা২ টি ক্লাচের মধ্য বিভক্ত থাকে ।
একটি ক্লাচে ১,৩,৫ ও (রিভার্সগিয়ার)নম্বর গিয়ার থাকেএবং অপর ক্লাচে ২,৪,৬নম্বর গিয়ার থাকে।
এই ট্রান্সমিশন অনেকটা মেনুয়াল ট্রান্সমিশনের মতো আবার অনেকটা অটো ট্রান্সমিশনের মতো।কারণ মেনুয়াল ট্রান্সমিশনের মতো গিয়ার শিফট করা যায় অটো ট্রান্সমিশনের মত অটোমেটিক গিয়ার চেঞ্জ হয়।
ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের কিছু ইতিহাস
একজন ফ্রেঞ্চ ইঞ্জিনিয়ার ADOLPHE KEGRESSE ১৯৩৯ সালেএই ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন আবিষ্কার করেছিলেন।
পরবর্তীতে ১৯৭০সালে PORSCHE তাদের রেসিং কার তৈরিতে এই ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের ব্যবহার শুরু করে। এমনকি তাদের তৈরি করা রেসিং কারটি ১৯৮৬ সালে WORLD SPORTSCAR CHAMPIONSHIP এ জয় লাভ করে ।
২০০৩ সাল থেকে VOLKSWAGEN প্যাসেঞ্জার কারে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন এর ব্যবহার শুরু করে।
বর্তমানে প্রায় অনেক রেসিং কার গুলোতেও এই ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন ব্যবহার হচ্ছে।
ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের সুবিধা
- ফুয়েলএফিশিয়েন্ট।
- তাৎক্ষনিক গতি পাওয়া যায়,দ্রুত গিয়ার শিফট হয়।
- স্মুথলি ড্রাইভ করা যায়।
- গিয়ার শিফট হলেও বোঝা যায়না।
- নিজের পছন্দে মেনুয়াল ট্রান্সমিশনের মতো গিয়ার শিফট করা যায় বা অটো ট্রান্সমিশনের মতো চলতে দেয়া যায়।
- ক্লাচ প্যাডেল নেই।
ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের অসুবিধা
- অন্যান্য ট্রান্সমিশনের তুলনায় দাম বেশি।
- লো স্পিডে কিছুটা জার্ক করবে যারা আগে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনে ব্যবহার করেনি তাদের কাছে কিছুটা খারাপ লাগতে পারে।
- মেইন্টেনেন্স কস্ট তুলনা মূলক বেশি।
কি কি কারনে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন সিস্টেম নষ্ট হতে পারে –
- বার বার ব্রেক করার ফলে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন গরম হয়ে যায়।
- জোরে অ্যাক্সেলারেটর প্রেস বা হটাৎ করে অতিরিক্ত স্পিড উঠালে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনে প্রেশার পড়ে।
- নিয়মিত ক্লাচ অয়েল চেক বা পরিবর্তন না করলে।
- জ্যামের সময় নিউট্রালে গিয়ার দিয়ে বসে থাকলে গিয়ার এংগেজ হয়ে ক্লাচ স্লিপকরে।
- ব্রেক প্যাডেল প্রেসনা করে গিয়ার চেঞ্জ করলে।
কি কি উপায়ে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন সিস্টেমকে ভালো রাখা যায়–
- বার বার ব্রেক করার অভ্যস ত্যাগ করতে হবে ,অর্থাৎ জ্যামে থাকলে একটু একটু করে আগানো যাবে না ।
- জ্যামে থাকা অবস্থায় গিয়ার নিউট্রালে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ব্রেক প্যাডেল সম্পুর্ণ প্রেস করে গিয়ার চেঞ্জ করতে হবে।
- সময় মতো ক্লাচ অয়েল চেক করতে হবে দরকার হলে পরিবর্তন করতে হবে।
- একটানে ৮০-১০০ না তোলাই ভালোএতে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন ভালো থাকবে।
- ব্রেক প্যাডেল বেশিক্ষন চেপে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ভালো দক্ষ মেকানিকের দ্বারা গাড়ির যাবতীয় কাজ করাতে হবে।কারণ ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন খুব সেন্সিটিভ তাই যেই সেই মেকানিক দ্বারা কাজ করানো যাবে না ।
- ঢালু রাস্তায় উঠার সময় ড্রাইভিং গিয়ারে থাকাঅবস্থায় যাতে গাড়ী পিছনে যায় তা খেয়াল করা প্রয়োজনে ব্রেক চেপে গাড়িকে স্ট্যাবল করে রাখা ।কারন ড্রাইভিং গিয়ারে থাকা অবস্থায় গাড়ি পিছনে গেলে ক্লাচ স্লিপ করতে পারে।
- দ্রুত অ্যাক্সেলারেট না করে গাড়িকে নিজ ক্ষমতা দিয়ে স্পিড উঠতে দেয়া।অর্থাৎ,খুব জোরে অ্যাক্সেলারেটর প্রেস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- গাড়ির কোম্পানি যেই ক্লাচ অয়েল রিকমান্ড করেছে সেটি ব্যবহার করা ।
আমাদের দেশে অটো এবং মেনুয়াল ট্রান্সমিশনের গাড়ির পাশাপাশি বর্তমানে ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনের গাড়ীও দেখা যায়। অনেকেই এই ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন সিস্টেমকে ভয় পায় কারণ তাদের ধারনা এটি নাকি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় ।
আচ্ছা তাহলে একটি কথা ভেবে দেখুন জাপানে বা অন্যান্য দেশে তারা কি করে গাড়ি গুলো হাজার হাজার মাইল চালায় কোনো সমস্যাছাড়া??
অনেক সময় আমাদের দেশে কয়েকশত কিঃমিঃ না যেতেই নষ্ট হয়ে যায় । এটির একমাত্র কারন হলো আমাদের ড্রাইভিং হ্যাবিট ।কারন আমাদের দেশে প্রায় সবাই মেনুয়াল ট্রান্সমিশন আর অটোট্রান্সমিশন চালানোতে অভ্যাস্ত আর তাই সবাই ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশনও সেই ভাবে ব্যবহার করে থাকে । তাই আমাদেরকে আগে সিস্টেমটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে বুঝতে হবে তারপর ব্যবহার করতে হবে তবেই আমরাও ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন সিস্টেম হাজার হাজার কিঃমিঃ কোনো সমস্যা ছাড়া চালাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
ধন্যাবাদ
কার’স ফিড বিডির সাথেই থাকুন
“মনে রাখবেন,সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি তাই
সাবধানে গাড়ি চালাবেন ভালো থাকবেন”