প্রথমত বলি, সিএনজি বা এলপিজি কোনওটাই গাড়ির জন্য প্রস্তাবিত কোনও জ্বালানী না। একটা গাড়ির ইঞ্জিন ডিজাইন করা হয় পেট্রোল/অকেটেন/ডিজেল দিয়া চলার জন্য। সেইখানে গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য প্রস্তাবিত বা উপযুক্ত জ্বালানী তেল ছাড়া, অন্য কোনও বিকল্প কিছু ব্যবহার করা কখনোই ঠিক না। কিন্তু বাংলাদেশে যেহেতু জ্বালানী তেল এর দাম বেশি, সেহেতু অনেকেই খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে জ্বালানী তেল এর বিকল্প হিসেবে এলপিজি অথবা গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন।
এইবার আসি এলপিজিতে, LPG (Liquid petroleum gas) হলো একধরনের তরল গ্যাস। যেইটা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ও ব্যবহার করা হয়। এলপিজিকে ক্লিন বা গ্রিন ফুয়েল ও বলা হয়। এটি প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণে তৈরি। এই তরল গ্যাস পেট্রোল ও অকটেনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ইঞ্জিনের জন্যও এই জ্বালানি বেশ কার্যকর। এলপি গ্যাস তরল অবস্থায় ইঞ্জিনে প্রবেশ করে, তাই এতে ইঞ্জিনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। এছাড়াও সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডারের চেয়ে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ওজন কম। এতে গাড়ির সাসপেনশনের ওপর অপেক্ষাকৃত কম চাপ পড়ে এবং আপনার গাড়ির সাসপেন্সন সিস্টেমের ক্ষতি কম হয়। ওজন কম হওয়ার কারণে গাড়িতে স্পিড তুলতে ও সময় কম লাগে। এছাড়াও ওজন হালকা হওয়ার কারণে এলপিজিতে রূপান্তরিত গাড়ি প্রাকৃতিক গ্যাস এর গাড়ির তুলনায় বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। প্রতি লিটার অকটেনের দাম ৮৯ টাকা এবং প্রতি লিটার এলপিজির দাম ৫৪ টাকার আশপাশে। যা অকটেন এর তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশের কম। এছাড়াও এলপিজি যেহেতু ইঞ্জিনে তরল অবস্থায় প্রবেশ করে, সেইক্ষেত্রে ইঞ্জিনের খুব বেশি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না।
গাড়িতে এলপি গ্যাস নেওয়ার জন্য যে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়, তা সিএনজি সিলিন্ডারের ওজনের তুলনায় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। সিএনজি সিলিন্ডারযুক্ত গাড়িতে পেছনে ভারী সিলিন্ডার থাকার কারণে গাড়ি সাধারণত বাটি বসিয়ে উঁচু করতে হয়। কিন্তু এলপিজি সিলিন্ডার যেহেতু কম ওজনের, তাই গাড়িতে বাটি না বসালেও চলে। সিএনজি গ্যাসে ২০০ বার (বিএআর) অধিক চাপ বা প্রেসার থাকতে হয়। যেখানে এলপিজিতে ৭.৫ বার চাপ বা প্রেসার থাকে। সিএনজি করা গাড়ির ইঞ্জিনেকে অনেক চাপ নিতে হয়। এছড়াও বিস্ফোরণের ঝুঁকি তোহ আছেই। একবার সিলিন্ডার কোনও কারণে বিস্ফোরিত হলে পুরা গাড়ি শেষ। যেইকোনও বড় এক্সিডেন্ট হলে, সিএনজিতে ট্যাংক বিস্ফোরিত হওয়ার একটা ভয় থাকে। আর বিস্ফোরণ হওয়ার সাথেসাথেই পুরা গাড়ি মুহুর্তেই পুড়ে ছাই! গাড়িতে সিএনজি বসানো মানে সার্বোক্ষন একটা বিস্ফোরক সাথে নিয়ে ঘুরা। তাই সময়মতো সিএনজি সিলিন্ডার চেক করানো উচিত।
একই পরিমাণ গ্যাস নিয়ে সিএনজিচালিত গাড়িগুলো যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, সেই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে এলপিজি গাড়িগুলো অন্তত ৩ গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। ৬০ লিটার সিএনজি দিয়ে ঢাকা শহরে সাধারণত ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যায়। এছাড়াও সিএনজি নেওয়ার সময় ফিলিং স্টেশনের প্রেশারের ওপর নির্ভর করে কতটা গ্যাস গাড়িতে প্রবেশ করছে। ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের প্রেশার কম থাকলে গাড়িতেও গ্যাস কম ঢুকে। তবে এলপিজি যেহেতু তরল, তাই এলপিজিতে প্রেশারের কোনো ব্যাপার নেই। তাই পুরো ৬০ লিটার ট্যাংক ভরা এলপি গ্যাসে গাড়ি অন্তত ৪০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে।
এলপি গ্যাসে সিএনজির তুলনায় কম কার্বন নিঃসরণ হয়। তাই সিএনজির তুলনায় এলপিজি পরিবেশ বান্ধব। এলপিজির সিলিন্ডারের প্রেশার সিএনজি সিলিন্ডারের তুলনায় মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। তাই এতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এছাড়াও সিএনজিতে ২৫ শতাংশ সিস্টেম লস থাকে, যেখানে এলপিজির সিস্টেম লস মাত্র ৫ শতাংশ।
পরিশেষে, গাড়ির জন্য সবচাইতে সঠিক জ্বালানী হলো, গাড়ির জন্য প্রস্তাবিত জ্বালানী। সেটা হতে পারে প্রেট্রোল/ অকেটেন অথবা ডিজেল। আর তেল এ গাড়ি চালাইলে গাড়ির থেকে আপনি অনেক ভালো একটা আউটপুট পাবেন। ইঞ্জিনের পার্ফরমেন্স ভালো পাবেন, গাড়ি ড্রাইভ করে মজা পাবেন। গাড়ির ইঞ্জিন ভালো থাকবে। তবে, আপনি যদি জ্বালানী খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে তেল এর পরিবর্তে সাশ্রয়ী বিকল্প খুঁজেন, তাহলে এলপিজি হবে বেটার অপশন।