বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রেস এবং এক্সির অর্থাৎ এন্ট্রি লেভেল সেডান গাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং এই বাজেটের গাড়িগুলোই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে টয়োটা এক্সিও এবং হোন্ডা গ্রেস, উভয় গাড়িরই জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আজকে দুইটার সাথে মধ্যে কিছু সুবিধা-অসুবিধা তুলনা করবো
১- দামঃ দাম বিবেচনায় এক্সিও এবং হোন্ডা গ্রেস, দুইটা গাড়িই ২০–২৫ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
২- ফিচার্সঃ দুইটা গাড়িই টয়োটা এবং হোন্ডা দুই কোম্পানির এন্ট্রি লেভেল সেডান। যার কারণে এইসব গাড়িকে মূলত বেসিক সেডান গাড়িই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু, তুলনামূলক ফিচার্স বিবেচনায় এক্সিওর চেয়ে গ্রেস অনেক অংশেই এগিয়ে থাকবে। হোন্ডা গ্রেস এ পেছনের সিটে এসি ভেন্ট আছে, কি লেস এন্ট্রি, প্যাডেল শিফটার ইত্যাদি থাকে। যা এক্সিওতে থাকে না।
৩- ইঞ্জিন পার্ফরমেন্সঃ ইঞ্জিন পার্ফরমেন্সের ক্ষেত্রে হোন্ডা বেশিরভাগ সময়েই টয়োটার চেয়ে এগিয়ে থাকে। এই দুইটা গাড়ির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম। গ্রেসের ইঞ্জিন পার্ফরমেন্সকে একটা ১৮০০ সিসির গাড়ির সাথে তুলনা করলেও ভুল হবে না। গ্রেসের ইঞ্জিন পাওয়ার ১৩৫ হর্সপাওয়ার এবং ১৭০ নিউটন মিটার টর্ক! অন্যদিকে এক্সিওর হহর্সপাওয়ার ১০৯ এবং টর্ক ১৩৬ নিউটন মিটার। দুইটাই ১৫০০ সিসির গাড়ি। কিন্তু গ্রেসের ইঞ্জিন পার্ফরমেন্স এবং ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স উভয়ই এক্সিওর চাইতে বেটার।
৪- এক্সটেরিয়র ডিজাইনঃ এক্সটেরিয়র ডিজাইন বিবেচনায় দুইটা গাড়িই বেসিক গাড়ি হওয়া স্বত্তেও দেখতে অনেক সুন্দর। কোনও অংশেই সস্তা কোনও গাড়ি মনে হবে না কোনওটাকেই। এইক্ষেত্রে এক্সিওর এবং গ্রেস দুইটা গাড়িই সমপর্যায়েই থাকবে। এক্সিওর ডিজাইন রেগুলার টয়োটার অন্যান্য সেডান গাড়ির মতোই। অন্যদিকে গ্রেসের ডিজাইন কিছুটা স্পোর্টি ভাইব দেয়। মোটকথা, ডিজাইন বিবেচনায় দুটো গাড়িই সমপর্যায়ের। যার কাছে যেইটা ভালো লাগে
৫- ইন্টেরিয়রঃ ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও দুটো গাড়ির বেশ সুন্দর। তুলনামূলকভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রেও দুটো গাড়ি সমপর্যায়েই থাকবে।
৬- রিসেল ভ্যালুঃ রিসেল ভ্যালুর ক্ষেত্রে গ্রেসের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে এক্সিও। এক্সিওর রিসেল ভ্যালু বাংলাদেশের অন্যান্য গাড়ির তুলনায় সবচেয়ে বেশি। দেখাযায়, ৫ বছর ব্যবহারের পরও সেইসময়ে নতুন কেনার কাছাকাছি দামে এক্সিও গাড়ি সেকেন্ড হ্যান্ড বিক্রি করা যাচ্ছে! অন্যদিকে গ্রেসের রিসেল ভ্যালু এখনো অনেক খারাপ আমাদের দেশে।
৭- পার্টস এভেইলএবেলিটিঃ টয়োটার গাড়ি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং টয়োটা পার্টসও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কমদামে পাওয়া যায়। অন্যদিকে হোন্ডার পার্টস দেশের মূল বিভাগীয় শহরগুলো, অর্থাৎ বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বাইরে খুজে পাওয়া বেশ দুষ্কর এবং দাম ও টয়োটার চাইতে অনেক বেশি হয়ে থাকে।
৮- সার্ভিসিং খরচঃ এক্সির সার্ভিসিং খরচ বাংলাদেশের অন্যান্য গাড়ির তুলনায় সবচেয়ে কম এবং সবচেয়ে সহজ। বিশেষ করে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ওয়ার্কশপের মেকানিকরা টয়োটা গাড়ি কাজ বুঝে। অন্যদিকে হোন্ডার সার্ভিস খরচ টয়োটার তুলনায় কিছুটা ব্যায়বহুল! সব ওয়ার্কশপ মেকানিক হোন্ডার কাজ এখনো বুঝে যা। বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে দেশের অন্যান্য জেলায় হোন্ডা গাড়ির সার্ভিসিং নিয়ে কিছুটা ভোগান্তি পোহানো লাগে।
৯- ইউজার এক্সপেরিয়েন্সঃ দুটো গাড়িরই ইউজার রিভিউ বেশ ভালো। তবে তুলামূলক এক্সিওর রিভিউ গ্রেসের চেয়ে বেশি ভালো। হোন্ডা গ্রেসের ট্রান্সমিশন হলো ডুয়েল ক্লাচ। বাংলাদেশের গরম পরিবেশ এবং অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের রাস্তায় ডুয়েল ক্লাচ অনেক যত্ন করে ব্যবহার করতে হয়। হোন্ডা গ্রেস অথবা ভেজেল এর ডুয়েল ক্লাচ নষ্ট হইছে এইরকম সমস্যা অনেকেরই হইছে। আর একবার ডুয়েল ক্লাচ নষ্ট হইলে, ঠিক করতে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে!! অন্যদিকে এক্সির ট্রান্সমিশন হলো সিভিটি ট্রান্সমিশন। আর বাংলাদেশের রাস্তার জন্য সিভিটি ট্রান্সমিশন পার্ফেক্ট এবং শঙ্কামূক্ত।
সবমিলায় কোন গাড়ি ভালো সেটা ডিপেন্ড করবে আপনার নিজের উপর। আপনি যদি কোনও পার্টস নিয়ে ঝামেলা না চান, রিসেল ভ্যালু এবং সার্ভিস নিয়ে ঝামেলা কম নিতে চান, তাহলে আপনার জন্য এক্সিও ভালো। অন্যদিকে আপনি যদি ফিচার্স, ইঞ্জিন পার্ফরমেন্স ভালো চান, রিসেল ভ্যালু নিয়ে মাথাব্যথা না থাকে, তাহলে আপনার জন্য হোন্ডা গ্রেস বেস্ট অপশন।