▪️ আজকের রিভিউ তারকা Toyota Crown. গাড়ির নাম যেমন,গাড়িটাও ঠিক তেমনই। টয়োটা ক্রাউন জাপান এ সবচেয়ে বেশি বিক্রিত লাক্সারি সেডান। বাংলাদেশে ও ক্রাউন বেশ জনপ্রিয়। Toyota Crown এর প্রোডাকশন শুরু হয় ১৯৫৫ সাল থেকে এবং বর্তমানে ক্রাউন এর ১৫তম জেনারেশন এর প্রোডাকশন চলছে। আজকের আলোচনা Toyota Crown এর ১৪তম জেনারেশন সম্পর্কে। যেটার প্রোডাকশন ছিলো ২০১২-২০১৮ পর্যন্ত। টয়োটা ক্রাউন (২০১৭) মডেলের বর্তমান দাম প্রায় ৫৩-৬৩ লাখ টাকার মধ্যে। ক্রাউন এর দুইটা ভ্যারিয়েন্ট হয়। Royel Saloon & Athlete। রয়েল সেলুন এর দুইটা প্যাকেজ আছে। যথাক্রমে S & G এবং এ্যাথলেট এ ৩টা প্যাকেজ হয়। যথাক্রমে S, E & G. রয়েল সেলুন এ লাক্সারি ভাইব বেশি, অন্যদিকে এ্যাথলেট একটু স্পোর্টি। ক্রাউন হাইব্রিড এবং ননহাইব্রিড দুইভ্যারিয়েন্ট এ আসে।
ডিজাইনঃ
ক্রাউন হচ্ছে,টয়োটার লাক্সারি সিরিজ।এই গাড়ির ডিজাইন পছন্দ হবে না,এমন মানুষ সহজে পাওয়া যাবে না। এককথায় অসাধারণ একটা গাড়ি। বাইরের ডিজাইন রয়েল সেলুন থেকে এ্যাথলেট এর বেশি সুন্দর। ফ্রন্ট গ্রিলটা বিশাল সাইজের। যেটা দেখতে বেশ ভালো লাগে। ক্রাউন এর লোগোটা অনেক সুন্দর।হেডলাইটে প্রোজেকশন লাইট+DRL আছে। সাথে হেডলাইট ওয়াশার এবং নিচে দুইটা এলইডি ফগলাইট আছে। এছাড়াও সামনে পেছনে পার্কিং সেন্সর আছে। ক্রাউন এর সাইডভিউ মিরোরটা দরজার সাথে লাগানো যেটা অনেকটা GT86 এর মতো। কিছু কিছু ইউনিটের সাথে ৩৬০° ক্যামেরা ও থাকে। গাড়িটা বেশ লম্বা,যার কারণে দরজাগুলা ও বেশ বড়। পেছনের টেইললাইটটা বেশ বড় সাইজের। রয়েল সেলুন এর চাইতে এ্যাথলেট এর টেললাইট বেশি আকর্ষণীয়। এছাড়াও ক্রাউন এর সাথে ডুয়েল এক্সস্ট থাকে। এ্যাথলেট এর সাথে সাইডস কার্টস আসে। আর ফ্রন্ট এবং রিয়ার বাম্পারটাও রয়েল সেলুন থেকে ভিন্নরকম । বডিতে বেশ কিছু লাইন আছে। যেগুলা গাড়ির ডিজাইনকে বেশ ফুটিয়ে তোলে। ক্রাউন এ্যাথলেট এর সাথে ১৭/১৮ ইঞ্চি এবং রয়েল সেলুনের সাথে ১৬ ইঞ্চির রিমস আসে। ক্রাউন এর বুটস্পেস বিশাল সাইজের। ৫২০ লিটার, বুঝতেই পারছেন, এই গাড়িতে দ্বারা অনেক কিছু বহন করতে পারবেন। লং জার্নিতে ব্যাগ রাখা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ইন্টেরিয়রঃ
যেহেতু টয়োটা ক্রাউন একটি লাক্সারি সেডান। সেহেতু এর ইন্টেরিয়র তোহ সুন্দর হবেই। লাক্সারি ডিজাইন, অনেক প্রিমিয়াম ফিচার্স আছে ক্রাউন এ। সিটগুলো বেশ বড়, কম্ফোর্টেবল এবং পাওয়ার এডজাস্টেবল। ক্রাউন এর ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম বেশ বড়। সাথে এসডিকার্ড স্লট+ডিভিডি ড্রাইভ আছে। এছাড়াও আরেকটা ডিসপ্লে আছে ক্লাইমেট কন্ট্রোল এর জন্য। মোট ২টা ডিসপ্লে। ক্রাউন এর সাথে ডুয়েল জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল আসে। উপরে একটা সানগ্লাস হোল্ডার আছে। সামনে ৪টা ও পেছনে ৪টা সহ মোট ৮টা এসি ভেন্ট আছে। সামনের এসি ভেন্টগুলো অটোমেটিক মুভ করে। এই গাড়িতে ৭টা এয়ারব্যাগ আছে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক পাওয়ার স্টেয়ারিং তোহ আছেই। সাথে স্টেয়ারিং কন্ট্রোল এবং টেলিস্কোপ এডজাস্ট এর সুবিধা ও আছে। ক্রাউনের সাথে কি-লেস এন্ট্রি এবং পুশ স্টার্ট থাকে। এ্যাথলেট এর সাথে প্যাডেল শিফটার থাকে। ক্রাউন এ ৪টা মোডে ড্রাইভ করা যায়। যথাক্রমে Snow, Sport, Eco, Normal. ট্র্যাকশন কন্ট্রোল আছে। গেইজক্লাস্টার এনালগ এবং সাথে একটা ডিসপ্লে ও আছে। কিছুকিছু মডেলের সাথে সানরুফ থাকে। গ্লাভবক্স, সেন্ট্রাল কন্সোল এইগুলা বেশ বড় সাইজের। সামনে পেছনে অনেকগুলা বটলহোল্ডার্স আছে। সামনে সানগ্লাস হোল্ডার্স, দুইটা এলইডি রুম লাইট এবং পেছনেও দুইটা এলইডি রুমলাইট আছে। ড্যাসবোর্ড, স্টেয়ারিং, দরজা, আর্মরেস্ট এইগুলায় অসংখ্য লেদারের টাচ আছে। সামনে ইউএসবি পোর্ট আছে। এছাড়াও ক্রাউন এ লেদার এবং ফ্যাব্রিক্স দুইধরনেরই সিট হয়।সাথে মেমোরি সিট এবং সিট হিটার এর অপশন তো থাকছেই। পেছনে অনেক বড় লেগস্পেস এবং হেডরুম আছে। পেছন থেকে সামনের সিট এডজাস্ট করার ব্যবস্থা আছে। আর্মরেস্টটা যথেষ্ট বড়।সাথে কাপহোল্ডার্স আছে এবং স্টোরেজ স্পেস আছে। রয়েল সেলুন এ পেছনের আর্মরেস্ট এ অনেকগুলা সুইচ আছে। যেইগুলা দিয়ে সামনের ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, প্রাইভেসি শেড, সিট এডজাস্ট, সিট হিটার এইগুলো কন্ট্রোল করা করা যায়। তবে এ্যাথলেট এ এই বাটনগুলো থাকে না। একটা খারাপ দিক হলো, ক্রাউন এর পেছনের ট্রান্সমিশন হাম্বটা বেশ উঁচা। যেটা মাঝখানের যাত্রীর জন্য একটু অস্বস্থির কারণ হতে পারে। এছাড়াও পেছনের জানালাগুলোয় প্রাইভেসি শেড আছে। যেহেতু লাক্সেরিয়াস কার, তাই সাসপেন্সন বেশ কম্ফোর্টেবল। তবে রয়েল সেলুনের সাসপেন্সন কম্ফোর্ট এ্যাথলেট এর চাইতে অনেক বেশি। এ্যাথলেট ও কম্ফোর্টেবল, তবে চাকা বড় হওয়ায় গর্তে চাকা পড়লে কিছুটা টেরপাওয়া যায়।
ইঞ্জিনঃ
Toyota Crown এর সাথে দুইধরনের ইঞ্জিন হয়। যথাক্রমে 2.0 litre 4 cylinder Turbo এবং 2.5 litre 4 Cylinder hybrid সাথে 8 speed Auto/ ECVT ট্রান্সমিশন। টার্বোচার্জড ইঞ্জিন থেকে ২৩২ হর্সপাওয়ার এবং 350 NM টর্ক পাওয়া যায় এবং 2.5L Hybrid ইঞ্জিন এর আউটপুট ১৭৮ হর্সপাওয়ার। ক্রাউন ফ্রন্ট হুইল ,রিয়ার হুইল এবং ফোরহুইল ড্রাইভ তিনটা ভ্যারিয়েন্ট হয়। তবে বাংলাদেশে সাধারণত ফ্রন্ট এবং রিয়ারহুইল ড্রাইভ ভার্সন আসে। ক্রাউন এর ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি ৬৫ লিটার।
▪️সবমিলিয়ে, ৫৭-৬৫ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে লাক্সেরিয়াস জেডিএম সেডান গাড়ি চাইলে,ক্রাউন বেস্ট একটা অপশন। একসময় ক্রাউন এর দাম অনেক বেশি ছিলো। প্রায় ৮০-৮৫ লাখ টাকা ও দাম ছিলো।সেই হিসেবে এখন দাম অনেক কমছে। এই গাড়িতে লাক্সারি এবং স্পোর্টি দুইটারই ভাইব পাওয়া যায়। ক্রাউন এর কম্পিটিটর চিন্তা করলে, এই মূহুর্তে বাংলাদেশে ক্রাউন এর কোনও জেডিএম কম্পিটিটর নাই।
▪️আপনি একজন কাস্টমার হিসেবে যদি লাক্সারি বেশি প্রাধান্য দেন, বেশি কম্ফোর্ট চান, তাহলে আপনার জন্য রয়েল সেলুন বেটার। আর যদি স্পোর্টি ভাইবকে বেশি প্রাধান্য দেন, তাহলে এ্যাথলেট বেস্ট।